জাতীয়
সামপ্রতিক সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়-
পাসপোর্ট সূচকে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু পরিচিত গন্তব্যও বাংলাদেশীদের উদ্বেগজনক হারে ভিসা প্রত্যাখ্যানের ঘটনায় শ্রম অভিবাসন তো বটেই, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বাংলাদেশী পর্যটকদের ভিসা আবেদন নাকচ করা হচ্ছে যথাযথ কারণ না দেখিয়েই। বিদেশ গমনে হঠাৎ কেন এই পরিস্থিতি?
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কঠোর ভ্রমণ ও ভিসা বিধিনিষেধের কবলে পড়েছেন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে উপসাগরীয় অঞ্চল, পূর্ব ইউরোপ এমনকি প্রতিবেশী ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এই বিধিনিষেধ। সম্প্রতি পঞ্চাশটিরও বেশি দেশে ভ্রমণ করা নাদির অন দ্য গো নামে পরিচিত বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত পর্যটক নাদির নিব্রাস মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানে ভিসার আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হন। তার সেই ভিসা রিজেকশন এর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার পর বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ভ্রমণকারীদের তথ্যমতে, অন্তত এক ডজন দেশ বাংলাদেশীদের ভিসা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে অথবা উদ্বেগজনক হারে আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে। যেসব দেশ বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, লাওস, মিশর, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান। চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিদের একসময়কার প্রধান গন্তব্য ভারত এখন মূলত চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্যাটাগরিতে অল্প কিছু ভিসা দিচ্ছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চল ও মালয়েশিয়ায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই তিনটি শ্রমবাজার এখন আর অদক্ষ কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে না। নিয়োগ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি, জাল নথি ও অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে শ্রম অসন্তোষের অভিযোগের পর এসব দেশের কর্তৃপক্ষ এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এমনকি রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার মতো যেসব পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে একসময় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হতো, ওইসব দেশও ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। দেশগুলোর অভিযোগ, অভিবাসীরা আসার পরপরই পশ্চিমের ইইউভুক্ত দেশগুলোতে চলে যায়।
শুধু ইউরোপ নয়, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মত জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য গুলোতে ভ্রমণকারীদের জন্য ভিসা পাওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণে কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাস খানেক লেগে যাচ্ছে। এছাড়া বাড়ছে আবেদন প্রত্যাখ্যানের হারও। তবে বড় প্রশ্ন ভিসা প্রত্যাখ্যান ও জটিলতার পেছনে কারণ কী? এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফা সিদ্দিকী গত 14 জুলাই একটি অনুষ্ঠানে কোনো রাখঢাক না রেখেই ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বিদেশগামী বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে জাল সনদ পত্র ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট। শ্রম অভিবাসনের উদ্দেশ্যে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের নথিপত্রে অসঙ্গতি থাকার বিষয়টি বাদ দিলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও পর্যটন ও ব্যবসায়িক কাজে বিদেশ প্রত্যাশীদের ভিসা রিফিউজ জালের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত পর্যটক নাদিরের ক্ষেত্রে। তিনি বর্তমান বৈধ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা এবং এমন ফান্ড দেখিয়েছেন যা দিয়ে তাজিকিস্তানে রাজকীয় ভ্রমণ করাও সম্ভব। তবুও কোনো কারণ উল্লেখ না করেই তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর আগেও তিনি মলদোভা ও বাহরাইন এ ভিসা আবেদন করে ব্যর্থ হন। এদিকে চীন ও হংকংয়ে ভিসা বাতিলের ঘটনাও বাড়ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ভ্রমণকারী তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে জানাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি হংকংয়ে ঢুকেছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে সেখানেই তারা রয়ে গেছেন। এটি বর্তমানে ভিসা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন তারা। ভিসা প্রত্যাখ্যানের এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর ও ভুটানের মতো সহজ বিকল্প ও ভ্রমণ ব্যয় বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটিং ব্যবসায় নেমে এসেছে মন্দাভাব। একই সাথে বাড়ছে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণের উদ্বেগ।
No comments: